টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মানে কি?

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং

বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রিয় শিল্প গুলোর মধ্যে অন্যতম শিল্প হচ্ছে টেক্সটাইল শিল্প। বর্তমান প্রযুক্তির এই যুগে যে কয়টি পেশার সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে টেক্সটাইল সেক্টর হল অন্যতম। 

তাছাড়া বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই টেক্সটাইল শিল্পের উন্নতির চরম শিখরে পৌছেঁ গেছে। ফলে এই শিল্পে দক্ষতা সম্পন্ন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা ব্যাপক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

টেক্সটাইল কি?
টেক্সটাইল শব্দটি সর্বপ্রথম ওভেন/বোনা কাপড়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে টেক্সটাইল শব্দটি একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ যার মধ্যে সকল প্রকার ফাইবার যেমনঃ তুলা, পাট, উল, সিল্ক, হেম্প ইত্যাদি, সকল প্রকার প্রক্রিয়া যেমনঃ উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং ইত্যাদি সবগুলোই টেক্সটাইলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

টেক্সটাইলের কাঁচামাল থেকে শুরু করে গার্মেন্টস ফিনিশিং পর্যন্ত যতগুলো প্রসেসিং হয় সবগুলোই টেক্সটাইলের অন্তর্ভুক্ত। 

টেক্সটাইল (Textile) শব্দটি হল ল্যাটিন, বিশেষণ টেক্সটিলিস (textilis) থেকে এসেছে, যার অর্থ হল 'বোনা', যা নিজেই টেক্সটাস থেকে উদ্ভূত, অর্থাৎ the past participle of the verb texere টেক্সার to weave যার অর্থ হল বোনা।

টেক্সটাইলের গুরুত্ব?
বর্তমান যুগের টেক্সটাইল ছাড়া পৃথিবীকে চিন্তাই করা যায় না। মানুষের বেঁচে থাকার চাহিদাগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা টেক্সটাইল পূরণ করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত টেক্সটাইল এর ব্যবহার হয়। টেক্সটাইল পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। সর্বপরি টেক্সটাইলের গুরুত্ব অপরিসীম।

কোথায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন?
আপনি যদি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হতে চান। তবে আপনাকে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং পড়তে হবে অথবা কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশের বহু সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ আছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৪টি পাবলিক টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও ১২০ টি ডিপ্লোমা পর্যায়ের প্রাইভেট ইন্সটিটিউট ও ৮টি পাবলিক পর্যায়ের ইন্সটিটিউট রয়েছে। সেই সব প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে থাকে। তাছাড়া বহু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও টেক্সটাইল বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজ, ইন্সটিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা?

ইনস্টিটিউটঃ

  • দিনাজপুর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, পুলহাট, দিনাজপুর।
  • নাটোর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, নাটোর।
  • টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, বাজিতপুর, টাঙ্গাইল
  • চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট,চট্টগ্রাম।
  • রংপুর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, রংপুর।
  • বরিশাল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, গৌরনদী,বরিশাল।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ

  • বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
  • খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা
  • মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল
  • ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজঃ

  • চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম।
  • (সাবেক বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেক্সটাইল টেকনোলজি) বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল  ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কালিহাতী টাঙ্গাইল(বর্তমান নাম)
  • বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নোয়াখালী।
  • ঝিনাইদহ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,ঝিনাইদহ।
  • পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পাবনা।
  • শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল।

বেসরকারি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ

  • বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এ্যান্ড টেকনোলজি।
  • বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি।
  • ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
  • শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি।
  • সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি।
  • আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
  • সিটি ইউনিভার্সিটি।
  • নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি।
  •  বাংলাদেশগ্রীন ইউনিভার্সিটি।
  • সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি।
  • প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি।
  • আইডিয়াল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট।

চাকুরি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা?
বর্তমান সময়ে টেক্সটাইল শিল্পে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা তুলনামূলক অনেক বেশি। তাই অনেকের ক্ষেত্রেই ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন করার আগেই চাকুরী হয়ে যায়।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা?
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে শিক্ষার্থীদেরকে ৬০% মার্কস সহ দ্বাদশ শ্রেণীতে পাস করতে হবে। তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে হবে। এছাড়াও অনেক সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে আপনি ভর্তি হতে পারবেন।

কেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন?
ইঞ্জিনিয়ার একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ প্রকৌশলী। ইঞ্জিনিয়ারিং মানে হচ্ছে প্রকৌশলের মাধ্যমে কোন কাজ সুসম্পন্ন করাকে বুঝায়। বিশ্বায়নের এই যুগে শিল্প  ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা ক্রমশই দ্রুত গতিতে বাড়ছে। আর এ কারণেই বাড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার গুরুত্ব।

 নিশ্চিত কর্মসংস্থানের একমাত্র এবং পরীক্ষিত মাধ্যম হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা। সারা বিশ্বে জেনারেল শিক্ষার চেয়ে বর্তমানে  কারিগরি শিক্ষা বেশি জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই প্রকৌশল জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অতি সহজ ভাবে, কম সময়ে, কম খরচে, কম জনশক্তিতে করা যায়।

কোথায় চাকুরী করবেন?
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করার পর কেউ বেকার রয়েছে এমন নজির নেই।তবে দুই এক জনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জনের পর আপনি সরকারী চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্টির পাশাপাশি  ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন গার্মেন্টস ও বায়িং হাউজে উচ্চ বেতনে চাকুরী পেতে পারেন।

তাছাড়াও বেসরকারী পর্যার্য় স্থাপিত দেশী বিদেশী বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল, ফ্যাশন হাউজ, বুটিক হাউজ ইত্যাদিতেও চাকুরীর সুযোগ রয়েছে। 

আবার বিভিন্ন কম্পোজিট শিল্প যেমনঃ নিটিং, স্পিনিং ও উইভিং শিল্পেও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করতে পারেন। তাছাড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা, ডাকবিভাগ, ও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান, ব্র্যাক, আশা, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, শিল্প ঋণ বিতরন সংশ্লিষ্ট পদে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারা চাকরির করে থাকে। বলা যায় শুধুমাত্র দেশের ভিতরেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বিশাল কাজের সুযোগ রয়েছে।
Next Post Previous Post