প্যাটার্ন কাকে বলে | প্যাটার্ন কত প্রকার ও কি কি | প্যাটার্ন তৈরির পদ্ধতি

প্যাটার্ন কাকে বলে?
পোশাকশিল্পে একটি পোশাকের প্রত্যেকটি অংশের অবিকল প্রতিরূপ সমতল শক্ত কাগজ বোর্ডে নির্দিষ্ট মাপে যে ফর্মা তৈরি করা হয়ে থাকে তাকে প্যাটার্ন বলে। সাধারণত পোশাকের প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা প্যাটার্ন তৈরি করা হয়।

আর এ সকল প্যাটার্ন কাপড় কাটার পূর্বে কাপড়ের উপরে অথবা কাগজের উপর পোশাকের প্রত্যেকটি অংশের চিত্রাষ্কানের জন্য ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া পোশাকের লাইলিং এবং ইন্টারলাইনিং এর জন্য প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়।

প্যাটার্ন
প্যাটার্ন

প্যাটার্নের উদ্দেশ্য?

প্যাটার্ন তৈরির মূল উদ্দেশ্য হল অল্প সময়ের মধ্যে অধিক কাপড় কাটা ও কাপড়ের অপচয় রোধ করা। আর তাই পোশাকশিল্পে একটি কাগজের শক্ত বোর্ডের প্যাটার্নগুলোকে যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা হয়। 

যাতে করে অনেক দিন ব্যবহার করা হয়। এরপর প্যাটার্নগুলোর চারদিকে সেলাইয়ের অ্যালাউন্স বা ইনলে যোগ করে নেয়া হয়। যাতে করে প্যাটার্ন অনুযায়ী কাপড় কেটে সেলাই করার পর পোশাকটি ছোট হয়ে না যায়।

প্যাটার্ন তৈরির প্রয়োজনীয়তা কি?

গার্মেন্টসে পোশাক প্রস্তুতের জন্য প্যাটার্ন আবশ্যক হয়। আর এ প্যাটার্নের সাহায্যে মুহূর্তে মধ্যে মার্কার তৈরি করা যায়। আর এই মার্কারের সাহায্যে পোশাক তৈরীর জন্য যত ইচ্ছা তত কাপড় কাটা যায়। তাই ছোট বড় যে কোন পোশাক শিল্পের জন্য প্যাটার্নের কোন বিকল্প নাই। প্যাটার্ন  তৈরি একটি শিল্পসম্মত সৃজনশীল কাজ। 

পোশাকের ভগ্নাংশ ও ফ্যাশনগুলোকে সুইং অ্যালাউন্স ও অন্যান্য অ্যালাউন্সের সঙ্গে সংযুক্ত করে সাইজ ও পরিমাণ ঠিক রেখে নিপুণ হাতে সৃজনশীলভাবে বোর্ড পেপারে ড্রইং করে সীজার বা কাঁচি দ্বারা ও মাল্টি কাটার দ্বারা জ্যামিতিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কেটে পোশাকের নিখুঁত প্যাটার্ন তৈরি করা হয়ে থাকে। আর যিনি প্যাটার্ন তৈরি করেন তাকে প্যাটার্ন মাস্টার বলে।

তাই সহজভাবে বলা যায় প্যাটার্ন তৈরি আসল উদ্দেশ্য হল অল্প সময়ে অধিক কাপড় পরিমাণ কাটা অর্থাৎ অল্প সময়ে অধিক পোশাক তৈরিতে সহায়তা করা। আর তাই পোশাকশিল্পে একটি কাগজের শক্ত বোর্ডের প্যাটার্ন থেকে হাজার হাজার কাপড় কাটা হচ্ছে। 

সেজন্য বিভিন্ন সাইজের প্যাটার্ন গুলোকে সংরক্ষণ করা হয়। যাতে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। তবে প্যাটার্নের সাহায্যে কাপড় কাটলে পোশাকের দোষগুণ সম্বন্ধে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায়। প্যাটার্ন কাটবার পর প্যাটার্নের সঠিকতা যাচাই করে কাপড় কাটা হয় বলে জামা ও কাপড়ের কোন রুপ ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় না। 
প্যাটার্নের প্রকারভেদ
প্যাটার্নের প্রকারভেদ

প্যাটার্ন কত প্রকার ও কি কি?

প্যাটার্ন সাধারণত দুই প্রকারঃ
  • স্যাম্পল প্যাটার্ন
  • প্রোডাকশন প্যাটার্ন

স্যাম্পল প্যাটার্ন কি?

যে প্যাটার্ন দ্বারা নমুনা বা স্যাম্পল কাটা হয় তাকে স্যাম্পল বা নমুনা প্যাটার্ন বলে।

প্রোডাকশন প্যাটার্ন কি?

যে প্যাটার্ন দ্বারা কোন গার্মেন্টস শিল্পে শত শত গার্মেন্টস তৈরি করা হয় তাকে প্রোডাকশন প্যাটার্ন বলে।

প্যাটার্ন তৈরির পদ্ধতি?

পোশাকশিল্পে প্যাটার্নকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায় যথাঃ
  • ব্লক প্যাটার্ন (Block pattern)
  • গার্মেন্টস প্যাটার্ন বা ওয়ার্কিং প্যাটার্ন (Garments pattern or Working pattern)

ব্লক প্যাটার্ন (Block pattern) কি?

ব্লক প্যাটার্ন বা বেসিক ব্লক প্যাটার্ন বলতে মূল প্যাটার্নকে বুঝায়। যা একটি নির্দিষ্ট আদর্শ শারীরিক গঠনের সাথে মানানসই। কিন্তু কোন প্রকার বিশেষ সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারক গঠন, ডিজাইন বা স্টাইলবিহীন। 

আর গড় মাপের উপর ভিক্তি করে যুবক, প্রাপ্তবয়স্ক যুবক, প্রাপ্তবয়স্ক, লম্বা ইত্যাদি গ্রুপের পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ব্লক প্যাটার্ন তৈরি করা হয়। আবার শিশুদের বয়সের উপর ভিত্তি করে আলাদা ব্লক প্যাটার্ন তৈরি করা হয়। নিচে ব্লক প্যাটার্ন দুটি পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়ঃ
  • সমতল পদ্ধতি 
  • মূর্তি নির্মাণ

সমতল পদ্ধতি কি?

পোশাকের বিভিন্ন অংশের প্যাটার্ন বিশেষ করে বডি, হাতা তৈরি করা হয় কারিগরি অঙ্কনের মাধ্যমে। আর কারিগরি অঙ্কনের ক্ষেত্রে শরীরের মাপ ও আনুপাতিক হারের নিয়ম ও পদ্ধতির প্রয়োগ প্যাটার্ন প্রস্তুতকারীর উপর নির্ভরশীল। 

এ ধরনের প্যাটার্ন কম্পিউটারের সাহায্যে তৈরি করা যেতে পারে। তবর কম্পিউটারের সাহায্যে তৈরির বেসিক প্যাটার্ন তৈরির ক্ষেত্রে প্যাটার্ন তৈরির প্রোগ্রাম কম্পিউটার ডিস্কে সংরক্ষণ করা হয়। সমতল পদ্ধতি মূলত মূর্তিনির্মাণ পদ্ধতি থেকে উদ্ভব হয়েছে। আর তাই এ পদ্ধতিতে অত্যন্ত দ্রুত প্যাটার্ন তৈরি করা যায়। 

মূর্তি নির্মাণ (Modelling) কি?

পোশাকের প্যাটার্ন তৈরির জন্য ইহাই প্রথম ও মূল পদ্ধতি এবং পোশাক শিল্পে এখনো এ পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে আদর্শ মূর্তির শরীরের সাথে মানানসই ব্লক তৈরি করা হয় যাকে টয়লি (Toile) বলে। আর এই টয়লি মূর্তির শরীরে পরানো হয় এবং মূর্তি শরীরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুষমভাবে তৈরি করা হয়। 

অতএব টয়লি মুর্তির শরীর হতে সরিয়ে নিয়ে টয়লির প্রতিটি অংশকে পৃথক পৃথকভাবে অপেক্ষাকৃত শক্ত কাগজ বা বোর্ড পেপারের উপর অঙ্কন করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্যাটার্ন অত্যন্ত নিঁখুত হয়, তবে প্যাটার্ন তৈরিতে সময় বেশি লাগে। 

গার্মেন্টস প্যাটার্ন বা ওয়ার্কিং প্যাটার্ন (Garments pattern or Working pattern) কি?

সমতল পদ্ধতিতে বা মডেলিং পদ্ধতিতে তৈরিকৃত ব্লক প্যাটার্ন বা বেসিক ব্লকের উপর ভিত্তি করে গার্মেন্টস প্যাটার্ন বা ওয়ার্কিং প্যাটার্ন তৈরি করা হয়ে থাকে। আর এক্ষেত্রে প্রতিটি প্যাটার্নকে বোর্ড পেপারের উপর রেখে পেন্সিলের সাহায্যে এর নকল অঙ্কন করা হয়। 

অতএব এই ব্লক প্যাটার্নের নকল বা কপি এর সাথে সেন্টার ব্যাক লাইন, বোতাম ঘর, বোতাম লাগানোর স্থান, ডার্ট, সেলাই ভাতা, ছাঁটাই ভাতা, সেন্টার ফ্রন্ট লাইন, প্লিট, পোশাক কতটুকু ঢ়িলা হবে, বিভিন্ন বা নির্দিষ্ট অংশের বিশেষ নকশা যদি থাকে ইত্যাদি সংযোজন করা হয়। 

তারপর প্যাটার্নসমূহ সঠিকভাবে সংযোজনের সুবিধার্থে সেলাই রেখা বরাবর U বা V আকৃতি খাঁজ কাটা হয়। এরপর একটি পোশাকের প্রতিটি অংশের জন্যই আলাদা আলাদা ওয়ার্কিং প্যাটার্ন বা গার্মেন্টস প্যাটার্ন তৈরি করা হয়। 
প্রতিটি প্যাটার্নের উপর তীর চিহ্নের (Arrow mark) সাহায্যে গ্রেইন লাইন (grain line) বা কাপড়ের টানা সুতার দিক-নির্দেশক চিহ্ন অব্যশই দেখাতে হবে। 

প্যাটার্ন আঁকা শেষ হওয়ার পর বোর্ড পেপার হতে ওয়ার্কিং প্যাটার্ন বা গার্মেন্টস প্যাটার্নকে ধারালো ছুরি বা কাঁচির সাহায্যে কেটে আলাদা করতে হবে। এরপর প্রতিটি প্যাটার্নের উপর সাইজ ও অংশের নাম লিখতে হবে। ওয়ার্কি প্যাটার্নের সাহায্যে নমুনা পোশাক (Sample garment) তৈরি করা হয়।
Next Post Previous Post