প্রশিক্ষণ কি | প্রশিক্ষণ পদ্ধতি কত প্রকার | প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

প্রশিক্ষণ কি?

প্রশিক্ষণ হল নিয়োজিত কর্মীদেরকে তার কাজ, দায়দায়িত্ব সম্পাদনের কলাকৌশল সম্বন্ধে অবহিত করার প্রচেষ্টা। কর্মী প্রশিক্ষণ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ভিক্তিপ্রস্তর স্বরুপ। 
প্রশিক্ষণ
প্রশিক্ষণ
সুষ্ঠু কর্ম সম্পাদনের জন্য কর্মীদের নিয়মসম্মত প্রশিক্ষণ অপরিহার্য এবং তার ব্যতিরেকে কর্মীদের ফলপ্রসূ কর্মসম্পাদন আদৌ আশা করা যায় না। সাধারণ অর্থে কোন কিছু হাতেনাতে শেখানো বা পেশাগত শিক্ষাদানই হল প্রশিক্ষণ। 

প্রশিক্ষণ কাকে বলে?

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের নিকট হতে স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ পাওয়ার লক্ষ্যে হাতে কলমে যে পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির শিক্ষা দেওয়া হয় তাকে প্রশিক্ষণ বলে। 

প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা?

  • প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পরিচিত 
  • তত্ত্বাবধান পরিসর বৃদ্ধি 
  • মিতব্যয়িতা
  • দুর্ঘটনা হ্রাস পায়
  • অনুপস্থিতি ও কর্মী আবর্তন হ্রাস
  • নবতর চিন্তাচেতনার উন্নয়ন 
  • কার্যকরী নির্দেশনা
  • দক্ষতা বৃদ্ধি 
  • জটিল বিষয়ে জ্ঞান দান
  • কারিগরি নৈপুণ্য বৃদ্ধি 
  • উৎপাদন ও পারিশ্রমিক বৃদ্ধি 
  • সহজ সমন্বয় 
  • পদোন্নতি 

প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পরিচিত

প্রশিক্ষণ নতুন নিযুক্ত কর্মীদেরকে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, উদ্দেশ্য ও কর্মধারা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান দান করে। যার ফলে নতুন কর্মী দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হয়ে উঠে। 

তত্ত্বাবধান পরিসর বৃদ্ধি

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের তত্ত্বাবধান সহজ এবং তারা কর্তৃপক্ষের আদেশ ও নির্দেশ পালনে অধিকতর সচেতন হয়। যার ফলে নিবার্হী কর্ম প্রচেষ্টা ও অধিক সংখ্যক শ্রমিক কর্মীকে তদারক করতে পারেন। 

মিতব্যয়িতা

প্রশিক্ষণ শ্রমিক কর্মীদেরকে দায়িত্ব পালন ও কর্মসচেতন করে তোলে। যার ফলে শ্রম, সময় ও সম্পদের অপচয় হ্রাস পায়। 

দুর্ঘটনা হ্রাস পায়

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারখানার কর্মীদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞান দান করা যায়। যার ফলে যথাসম্ভব দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। এতে করে দুর্ঘটনাজনিত সমস্যা কম হয়। 

অনুপস্থিতি ও কর্মী আবর্তন হ্রাস

প্রশিক্ষণ কর্মীদের কর্মদক্ষতা বাড়ায়, আনুগত্য বৃদ্ধি করে, কর্মস্পৃহা জাগ্রত করে, আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধি করে। যার ফলে কাজে অনুপস্থিতি ও কর্মী আবর্তন হ্রাস পায়। 

নবতর চিন্তাচেতনার উন্নয়ন

প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীদেরকে সর্বশেষ তত্ত্ব ও তথ্য অবগত করানো যায়। প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার ও মত বিনিময়ের সুযোগ পায়। 

কার্যকরী নির্দেশনা

প্রশিক্ষিত কর্মী খুব সহজেই নির্দেশনা সম্পর্কে বুঝতে পারে বলে নির্দেশনার বাস্তবায়ন সহজতর হয়। যার ফলে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যকর নির্দেশনা প্রতিষ্ঠিত হয়। 

দক্ষতা বৃদ্ধি

প্রশিক্ষণ নতুন ও পুরাতন সকল স্তরের কর্মীর কর্মস্পৃহা, কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে নতুন কর্মী দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হয়ে উঠে।  

জটিল বিষয়ে জ্ঞান দান

আধুনিক প্রযুক্তির জটিল বিষয়ে জ্ঞান অর্জন বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই একমাত্র সম্ভব। যার ফলে নতুন প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা কলাকৌশল ও জটিল যন্ত্রপাতি ইত্যাদির প্রয়োগ ও ব্যবহার সম্ভব হয়। 

কারিগরি নৈপুণ্য বৃদ্ধি

প্রশিক্ষণ প্রদান করে কর্মীদের কারিগরি নৈপুণ্য বৃদ্ধি করা যায়। শ্রমিক কর্মী বা নির্বাহীর কাজে গুণগত ও মানগত পরিবর্তন সাধনে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। 

উৎপাদন ও পারিশ্রমিক বৃদ্ধি

প্রশিক্ষণের ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মান উন্নত হয়। এবং সামগ্রিক উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধি পায় এবং কর্মীদের পারিশ্রমিকের পরিমাণ বেড়ে যায়। 

সহজ সমন্বয়

প্রশিক্ষণের দ্বারা শ্রমিক কর্মীদের পারস্পরিক মানসিক সম্পর্ক উন্নত হয়। যার ফলে তাদের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায় এবং কাজের মধ্যে সমন্বয় সহজ হয় যা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির সহায়ক। 

পদোন্নতি

প্রশিক্ষণ শ্রমিক কর্মীদের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করার কারণে পদোন্নতির সৃষ্টি হয়। 

প্রশিক্ষণ
প্রশিক্ষণ

প্রশিক্ষণ পদ্ধতি কত প্রকার

বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি গুলো হলঃ
  • শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ
  • সেমিনার
  • অধিবেশন
  • ওয়ার্কশপ
  • বিশেষ সভা
  • চলচ্চিত্র ও টিভি 
  • পদ পরিবর্তন 
  • পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি 
  • বক্তৃতা পদ্ধতি
  • আলোচনা পদ্ধতি 
  • প্রোবেশন পদ্ধতি
  • কোচিং 
  • ভুমিকা অভিনয়

শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ

এ পদ্ধতি অনুযায়ী কোন ব্যক্তির চুক্তির অধীনে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রতিষ্ঠান শিক্ষানবিস কর্মী হিসেবে প্রশিক্ষণ লাভ এবং প্রশিক্ষণ লাভে সফল হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান চাকরিতে নিয়োজিত থাকতে বাধ্য থাকে। 

সেমিনার

এতে বিশেষ উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক বিষয়ে একাধিক অধিবেশনে আলাপ আলোচনার ব্যবস্থা রাখা হয়। একেক অধিবেশনে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি নির্দিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য পেশ বা লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। 

পরবর্তী সময়ে সেমিনারের সভাপতির পক্ষ হতে আদিষ্ট হয়ে উক্ত বক্তব্যের উপর অংশগ্রহণকারীরা আলোচনা করেন বা মতামত বিনিময় করেন। 

অধিবেশন

সুপারভাইজার এবং মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের জন্য প্রশিক্ষণের এরুপ পদ্ধতির যথেষ্ট উপযোগী। আর এধরনের প্রশিক্ষণে একসাথে অনেক প্রশিক্ষণার্থী অংশ নিতে পারে। 

ওয়ার্কশপ

এক্ষেত্রে প্রশিক্ষক কোন বিষয় প্রশিক্ষনার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেন। প্রশিক্ষণার্থীরা উক্ত বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে ছোট দলে আলোচনা করে এবং উক্ত বিষয়ে করণীয় নিজেরা প্রশিক্ষণস্থলে বসেই নির্ধারণ করার চেষ্টা করে। 

বিশেষ সভা

জরুরি বিশেষ সভা আহ্বান করে অংশগ্রহণকারীকে ব্যবস্থাপকের প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা, কৌশল ও কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা হয় ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। 

চলচ্চিত্র ও টিভি

এ পদ্ধতির মাধ্যমে দূরের এবং অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে তাদের কাজের পদ্ধতি ও পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হয়।

পদ পরিবর্তন

ব্যবস্থাপক বা নির্বাহীদের মনোন্নয়নে পদ পরিবর্তন একটি উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষণ পদ্ধতি। আর এ পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মী বা নির্বাহীদেরকে প্রতিষ্ঠানের এক পদ থেকে অন্য পদে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হস্তান্তর করে বিভিন্ন কাজে পারদর্শী করে তোলার চেষ্টা করা হয়। 

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি

এটা অনেকটা শিক্ষানবিশ পদ্ধতির অনুরূপ। তবে এক্ষেত্রে নির্বাহীর অধীনে খুবই অল্পসংখ্যক প্রশিক্ষণার্থীকে রাখা হয়। এতে নির্বাহী প্রশিক্ষণার্থীদেরকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে পারে। 

বক্তৃতা পদ্ধতি

এতে প্রশিক্ষণার্থীদের নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত করা হয়। প্রতিষ্ঠানের কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কোন বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করে। এতে প্রশিক্ষণার্থীরা জ্ঞান লাভের সুযোগ পায়। 

আলোচনা পদ্ধতি

কোন বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেও অধস্তনদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরিকল্পনা প্রণয়ন কালে বা পরবর্তী সময়ে এর বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অধস্তনদের সাথে মত বিনিময়ের জন্যও আলোচনা সভার ব্যবস্থা করা যায়। 

প্রোবেশন পদ্ধতি

এ পদ্ধতি অনুযায়ী একজন প্রশিক্ষণার্থী নির্বাহী বা কর্মীদের একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী বা বিশেষজ্ঞ কর্মীর অধীনে রেখে কার্যক্ষেত্রে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয়। 

কোচিং

এ পদ্ধতিতে একজন সুপারভাইজার বা ব্যবস্থাপকের অধীনে কয়েকজন কর্মীদের নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। এতে ঊর্ধ্বতন প্রশিক্ষনার্থীদের কী কাজ করতে হবে, কিভাবে করতে হবে তা বলে দেন এবং প্রশিক্ষণার্থীর নির্দেশিত পন্থায় কাজ করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করেন। 

ভুমিকা অভিনয়

এ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করতে দিয়ে দেখানো হয়। কর্মীদের মানবীয় সম্পর্ক বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এ পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী। 
Next Post Previous Post